বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৭ অপরাহ্ন

শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ঠিকমতো পড়ালেখা করতে শিক্ষার্থীকে শাসন করেন এক শিক্ষক। শাসনের বিষয়টি শিক্ষার্থী তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতাকে বলে জানাগেছে। ক্ষুব্ধ বাবা স্কুল থেকে শিক্ষককে বের করে রাস্তায় নিয়ে লাঞ্ছিত করেন। লাঞ্ছনার বিষয়টি ওই শিক্ষক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কলেজ শিক্ষককে জানিয়ে বিচার চান। পরে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে।

রোববার (৩১ অক্টোবর) এমন ঘটনার বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীরা নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কের মানববন্ধন করে।

মানববন্ধন শেষে চান্দপুর কলেজ মাঠে প্রতিবাদ সভা করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে এই ঘটনায় শনিবার স্কুল প্রতিষ্ঠাতা এবং আওয়ামী লীগ নেতা দুজনই থানায় পরস্পর বিরোধী অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ বলছে, দুই পক্ষ দুই ধরনের অভিযোগ করেছে। সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার বিসকা ইউনিয়নের চান্দপুর ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন রিয়াজুল ইসলাম নাদিম। তিনি কাশিগঞ্জ বাজারে ‘ক্রিয়েশান মডেল স্কুল’ নামে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করেন বিসকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিকুল ইসলাম উজ্জলের মেয়ে।

১০ অক্টোবর বিদ্যালয়ের গণিত ক্লাসে ওই মেয়েকে শাসন করেন শিক্ষক পলাশ কিশোর। ঠিকমতো না পড়ায় তাকে মৌখিকভাবে শাসন করেন। স্কুল শেষে বাড়িতে গিয়ে ওই ছাত্রী বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। পরে ওইদিন বিকেলে বিদ্যালয় থেকে পলাশকে ডেকে রাস্তায় নিয়ে যান উজ্জল ও তার ভাগ্নে রুবেল পারভেজ। রাস্তায় তাকে দাঁড় করিয়ে লোকজনের সামনে চার-থাপ্পর দিয়ে অপদস্ত করেন। পরে পলাশ বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রিয়াজুলকে জানিয়ে বিচার চান।

শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণের বিষয়ে উজ্জলের কাছে জানতে চান রিয়াজুল। এতে তার ওপরও ক্ষুব্ধ হন এই আওয়ামী লীগ নেতা। এর জেরে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কাশিগঞ্জ বাজারের আকন্দ ফার্মেসিতে গিয়ে রিয়াজুলকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই বিষয়ে শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

অপরদিকে উজ্জলও শনিবার সন্ধ্যায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, তার ভাগ্নের স্ত্রীকে চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার নামে সাত লাখ টাকা নেন রিয়াজুল। চাকরি না হওয়ায় পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিলেও দুই লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে না।

এই ব্যাপারে প্রভাষক রিয়াজুল অভিযোগ করেন, তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলে শিক্ষার্থীকে শাসন করায় শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়। এর কারণ জানতে চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপরও হামলা করা হয়েছে। নিয়োগের নামে টাকা নেওয়ার বিষয়ের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জলের দাবি, বাতাসে ক্লাসরুমের জানালা লেগে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তার মেয়েসহ তিন ছাত্রীকে মারধর করেন শিক্ষক। বিষয়টি জানতে পেরে ওই শিক্ষককে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু ওই ঘটনার সঙ্গে রিয়াজুলের ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি অভিযোগ করেন, চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির ছেলে রিয়াজুল তার ভাগ্নের স্ত্রীর চাকরির কথা বলে টাকা নিলেও পুরো টাকা ফেরত না দেওয়ায় ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।মারধরের বিষয়ে জানতে স্কুল শিক্ষক পলাশের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি তা রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকের আহমেদ বাবু জানান, শিক্ষককে মারধরের ঘটনা শুনেছেন। বিষয়টি তারা মীমাংসার চেষ্টা করছেন।

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের বলেন, দু’পক্ষ থেকে দু’ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিক্ষককে মারধরের ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com